আমি আজকে নাকের নানা প্রকার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব।
নাক নিয়ে আমরা অনেক সমস্যায় পড়ি।
সেই সমস্যাগুলোর ভিতরে অন্যতম হচ্ছে, নাকের মাংস বৃদ্ধি, নাকের পলিপ তারপর আছে সাইনোসাইটিস।
এ শব্দগুলো আমরা রোগীদের কাছ থেকে শুনে থাকি। আর আমার কাজ হচ্ছে নাকের এই
সমস্যাগুলো নিয়ে খুব সুক্ষ্ম আলোচনা করা। আমি চেষ্টা করব এর সাথে স্টিল পিকচার দেওয়ার। প্রথমে আমরা নাকের এ্যানাটমী টা একটু জানার চেষ্টা করি। সেটা হচ্ছে এই রিলেটেড এ্যানাটমী, নাকের দুই পাশ দিয়ে তিনটা তিনটা করে মোট 6 টি টারবিনেট থাকে, এই টারবিনেট গুলোর কাজ হচ্ছে সিকিউরিটি গার্ডের মত। আমরা দেখেছি যে একজন সিকিউরিটি
নাকের গার্ডের কাজ কি?
যখন আপনি কোন নতুন অফিসে ঢুকতে যাবেন, তখন দেখবেন সে আপনাকে বাধা প্রদান করতেছে। অর্থাৎ আপনি যদি ওই অফিসের জন্য অনুকূল হন তাহলে আপনি ঢুকতে পারবেন, না হলে আপনি ঢুকতে পারবেন না। আমাদের এই 6 টি টারবিনেট, সিকিউরিটি গার্ড কিভাবে হল সেই আলোচনায় আমরা আসি। আসলে নাকের ভিতর দিয়ে মূলত কি আসা-যাওয়া করে? অবশ্যই বাতাস যা আমরা অক্সিজেন বলি।
এখন এই বাতাস গ্রহণ করার সময় বাতাসের সাথে ধূলিকণা যায়, দুর্গন্ধ যায়, ঠান্ডা বাতাস ও গরম বাতাস সেটাও যায়।
যখন ধূলিকণা যায় টারবিনেট বলে যে, আপনি যেতে পারবেন না। তারমানে তাকে বের করে দেওয়ার প্রসেসিং সে শুরু করে দেয় এবং হাচির মাধ্যমে ধূলিকণাকে বের করে দেওয়া হয়। আপনারা
হয়তো অনেকেই জানেন না, যে একটা হাচি যে ধাক্কা দেয় তার গতি ১২০ কি. মি. এর উপরে। ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় যে গাড়িগুলো যায় তার তারচেয়েও বেশি গতি। যখন ধাক্কা দিয়ে পারেনা। তখন নাক পানি ছেড়ে দেয়। তারমানে দেখেন একটা ময়লা বের করার জন্য সে কত টাইপের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এবার আসেন গরম বাতাস, ঠান্ডা বাতাসের বিষয়।
মূলত যারা বাসায় এসি চালায়, যারা কলকারখানায় চাকরি করে কিংবা মহিলাদের রান্নাঘর যদি ছোটখাটো হয়,
জানালা না থাকে সেখান থেকেও কিন্তু গরম বাতাস নাকের ভেতর দিয়ে যায়।
আমাকে বডির তাপমাত্রা নিয়ে কিছু কথা বলতে হবে বুঝার সুবিধার্থে।
মোটামুটি আমরা সবাই জানি যে বডিতে 37 ডিগ্রি সেলসিয়াস টেম্পারেচার বিদ্যমান। মানবদেহ সবচেয়ে কমফোর্ট ফিল করে 25 ডিগ্রি সেলসিয়াস টেম্পারেচারে। অর্থাৎ আপনি যদি 25 ডিগ্রি সেলসিয়াস টেম্পারেচার এর ভিতরে থাকেন আপনার তেমন কোনো সমস্যা হবে না,
আপনি খুব ভালো ভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন।
কিন্তু এর বেশি কম হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দেখবেন শীতের সময় আমাদের টেম্পারেচার নেমে 12 তে আসে।
এখন আপনি 12 ডিগ্রী সেলসিয়াসের ঠান্ডা বাতাস নাক দিয়ে টান দিলে টারবিনেট এর সাথে ঠাণ্ডা বাতাসের একটা সংঘর্ষ হয়।
আগেই বলেছি গার্ড এর মত কাজ করে।
যখন সে ঠান্ডা বাতাস অনুভব করবে তখন তারা নিজেদের সাইজটা একটু বড় করে নিশ্বাসের রাস্তাটা চিকন করে দেয়।
নাকের নানা প্রকার সমস্যার ব্যাখা
আমি আপনাদের নাকের নানা প্রকার সমস্যা বোঝার সুবিধার্থে একটু বলি যারা স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে গিয়েছেন দেখবেন স্টেডিয়ামের গেট বিশাল বড় কিন্তু যেদিন খেলা হয় ঐদিন বাশ বেঁধে বেঁধে গেটটা চিকন করে দেয়।
কারণ যতগুলা ম্যান ভেতরে ঢুকতে চায় তাদের সকলকে কর্তৃপক্ষ যেন ভালোভাবে চেক করে ভিতরে ঢুকাইতে পারেন।
তো দেখেন মেকানিজম! টারবিনেট গুলোও ঠিক একই কাজ করে অর্থাৎ প্রয়োজনে তারা বাতাস যাওয়ার রাস্তা সরু করে দিতে পারে।
গরম কিংবা ঠান্ডা যে বাতাসই যাক সে যেন নিয়ন্ত্রিত ভাবে ভিতরে ঢুকে।
এখন আপনি যদি লং টাইম অনিয়ম করেন যেমন আপনি যদি ব্যাংকে চাকরি করেন, আপনার ব্যাংক
কর্তৃপক্ষ দেখা যাচ্ছে যে 17~ 18 ডিগ্রী সেলসিয়াস টেম্পারেচারে এসি রাখে। আপনি অফিস করতে বাধ্য। একটানা 5 বছর অফিস করতেছেন তখন আপনার বডি বুঝে যায় যে, আমার এই ম্যান এই টেম্পারেচার থেকে আর বের হতে পারবে না। সুতরাং আমাদের একটা স্থায়ী সলিউশন দরকার।
সেই জন্যে তারা কি করে, নিজের ভলিউমটাকে বড় করে। এটা ঠান্ডার ক্ষেত্রে হতে পারে আবার গরমের ক্ষেত্রেও হতে পারে। আমি আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে মাঝে মাঝে খুব সহজ উদাহরণ ইউজ করি। মনে করেন যে বাংলাদেশের কোন একটা থানায় 50 জন পুলিশ আছে। এই 50 জন পুলিশ ওই থানাটাকে খুব ভালোভাবে কন্ট্রোল করে।
যদি কোন কারণে সেখানে বড় ধরনের গ্যাঞ্জাম লেগেই থাকে তখন সরকার ডিসিশন নেয় এই থানায় পুলিশ বাড়ানো উচিত। 50 জন পুলিশ এখানকার ঝামেলা থামাতে পারেনা, সুতরাং এই থানার পুলিশ বাড়িয়ে ঝামেলা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এখন চিন্তা করেন ঠিক একই ভাবে, টারবিনেট তার সাইজ বড় করে।
যখন সাইজ বড় হয়ে যায় তখন আপনি নতুন যে প্রবলেমে পড়লেন তা হলো, আপনার নাকের ভিতরে যে পরিমাণ ফাকা জায়গা ছিল এখন সেই পরিমাণ আর নাই। অর্থাৎ এখন যদি আপনি একটু দৌড়ানোর চেষ্টা করেন, একটু টেনশন করেন, আপনার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে। 1 তলা থেকে পাঁচতলায় উঠতে চান আপনি হাপিয়ে যান।
কারণ কি?
কারণ হচ্ছে আপনার নাকের রাস্তা চিকন হয়ে গিয়েছে।
চিকন হওয়ার দরুন যে পরিমাণ অক্সিজেন আপনার নাক দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল দেহের ভিতর, সেই পরিমাণ অক্সিজেন এখন যেতে পারছেনা।
যার ফলে আপনি কোন কর্ম করতে গেলে টায়ার্ড হয়ে যান।
কারণ আমাদের ব্রেইন গ্লুকোজ এবং অক্সিজেন ছাড়া ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।
এজন্য আরো উপসর্গ দেখা দিবে। সেগুলোর কথা এখন উল্লেখ করি। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে। যেহেতু নাক দিয়ে ঠিকমত নিশ্বাস নিতে পারবেননা সেহেতু আপনি মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিবেন। আবার নিঃশ্বাস নেওয়ার রাস্তা মুখ নয়। অতএব গলা শুকিয়ে যাবে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাবেন না।
বিধায় সবসময় আপনার ক্লান্তি লাগবে। বডির ভেন্টিলেশনে ভালোভাবে হবে না বিধায় আপনি অলওয়েজ ঠান্ডা, সর্দি, হাচিতে ভুগবেন। আপনার কপাল এবং নাকের দুই পাশে গাঢ় পদার্থ জমবে সেহেতু এই দুই পাশ কামড়াবে।
অতিরিক্ত ঘাম হবে। হা-করে নিঃশ্বাস নিবেন। মুখ খোলা রেখে ঘুমাবেন। নাক দিয়ে, চোখ দিয়ে পানি পড়বে। পলিপ, নাকের মাংস বৃদ্ধি যেটাই বলেন না কেন।
শুধুমাত্র টারবিনেট ফুলে বড় হওয়ার দরুন আপনি কতগুলো সমস্যা ফেস করছেন। ডায়াগনোসিস এখানে দরকার আছে।
সমাধানের জন্য আমাদের যেটা প্রথমেই করতে হবে রোগের উপসর্গগুলো কালেকশন করতে হবে,
করার পর একটা পিএনএস এক্সরে দেওয়া লাগবে। অনেক সময় সেপ্টাম বেকে যায়।
IgE দিতে পারেন, রোগীর এলার্জিক ঝামেলা আছে কিনা সেটা বোঝার জন্য। এইগুলা করার পর রোগের ট্রিটমেন্ট শুরু করতে হবে। রোগিদের দুইটা কনসেপশন একটা এ্যালোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথিক। যারা অপারেশন করতে চাই তারা অপারেশন করবেন। আর যারা অপারেশনকে ভয় পায়, হোমিওপ্যাথির উপর আস্থা রাখে, তাদের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ভাল ফল মিলে।
যে সমস্ত মেডিসিন গুলো আমাদের আছে,
সেটা অবশ্যই উপসর্গ অনুযায়ী আসবে এবং কিছু কম্বিনেশন মেডিসিন আছে সেটাও ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও রয়েছে এক্সটার্নাল ইউজের মেডিসিন। যেটা নাকে লাগিয়ে দিলে খুব ইজিলি বাড়তি লেয়ার রিমুভ করানো যায়। সমস্যার সমাধান হয়। আমি মাঝখানে একটা কথা ভুলে গেছি।
টারবিনেট যখন ভলিউম বাড়াইলো। ফুলে বড় হল। এখানে কি ঘটনা ঘটল আসলে?
টারবিনেট সবার আছে আমার, আপনার, রোগীর।
যখন টারবিনেট ফুলে, তখন অরিজিনাল টারবিনেট এর উপর দিয়ে একটা ফলস লেয়ার পরে।
এর ফলস লেয়ারের ভিতরে পানি থাকে। এই লেয়ার এর কারণেই আমাদের নাক বন্ধ হয়।
এক্সটার্নাল ইউজের দরুন বাড়তি লেয়ার খুব সহজেই সরানো যায়।
লেয়ার রিমুভ হলে নাকের ভিতর ফাকা জায়গা তৈরি হয়।
নাকের নানা প্রকার সমস্যা
তখন প্রপারলি অক্সিজেন নাকের ভিতর দিয়ে যাবে এবং রোগি কমফোর্ট ফিল করবে।
সম্পুর্ন কষ্ট দূর হতে কিছুটা সময় লাগবে।
কারন একটা ডিজিজ যখন লংটাইম শরীরে থাকে তখনই সেটার ব্যাপারে মানবদেহ অনেকটা ইউজড হয়ে যায়।
এটাই ছিল আমার নাক নিয়ে আলোচনা।
আমি আশা করি যারা রোগী এবং আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও আমার প্রিয় ডাক্তার ভাই, বোনেরা বুঝতে পেরেছেন নাকের নানা প্রকার সমস্যা।
রুগিকে আমরা যত সহজ ভাষায় কাউন্সিলিং করতে পারবো সে তত বেশি আপনার উপর আশ্বস্ত হবে।
ডাক্তারের অবশ্যই কর্তব্য একজন রুগিকে/ এটেন্ডেন্টেকে তার রোগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া।
আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কোন ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।